ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ভয়াবহ দখলবাজি, প্রতারণা, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রিপন নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, অতীতে নবীনগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদে থাকা এই ব্যক্তি এখন বিএনপি নেতাদের ছায়াতলে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নারুই গ্রামে তার তাণ্ডবের শিকার শতাধিক সাধারণ মানুষ তাদের জমি হারিয়ে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে
অভিযোগ অনুসারে, এক সময় নবীনগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা থাকা এই ব্যক্তি বর্তমানে নবীনগর বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতার মদদে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে এসব নেতাকে ম্যানেজ করে তিনি তার অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
নারুই গ্রামে শত শত নিরীহ মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব-প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার করে তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নিচ্ছেন এবং জায়গা-সম্পত্তি নিজের করে নিচ্ছেন। জমি রক্ষা করতে গেলে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি তার অত্যাচারের শিকার হয়ে অনেক পরিবার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
অভিযোগকারীদের মতে, তিনি তার গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি মাওনা, ময়মনসিংহ রোডে অল্প মূল্যে জমি কিনে উচ্চমূল্যে ভ্যালুয়েশন দেখিয়ে সোনালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ভুয়া ভ্যালুয়েশন ও মিথ্যা তথ্য দেখিয়ে ব্যাংক জালিয়াতি করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই অর্থ ব্যবহার করে তিনি শুধু তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেননি, বরং নারুইসহ আশপাশের এলাকার জমি দখল করেও সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করেছেন
ঢাকার উত্তরা সেক্টর ১১-এর অফিসে বসে একের পর এক প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন এক্সেসরিজ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে তাদের বিল পরিশোধ না করে চরম প্রতারণা করেছেন। গোল্ড স্টার কোম্পানির মালিক জিলানী তার কাছ থেকে ১২০০ মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছেন, যা গত ৫ বছরেও পরিশোধ করা হয়নি। ব্যবসায়িক মহলে তার এমন প্রতারণার জন্য তাকে 'অবিশ্বাস্য প্রতারক' হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, এক সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হলেও এখন বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব দখলবাজি চালাচ্ছেন তিনি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তিনি তার অপরাধ ঢাকতে রাজনৈতিক অবস্থান ব্যবহার করছেন এবং বিএনপির পরিচয়ে তার দখলবাজি, প্রতারণা, এবং অত্যাচারের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে অন্যতম নারুই গ্রামের বুরহান ও তার পরিবার, যারা জমি হারিয়ে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মতে, এই প্রভাবশালী ব্যক্তি কেবল জমি দখল করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছেন। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে এই অত্যাচারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের জমি-সম্পত্তি ফেরতের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগকারীরা আরও জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রেখেছেন। তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান অনেকে, কারণ তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং ক্ষমতার প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য জানার জন্য তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।