নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, [১৪এপ্রিল২০২৫ ]: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা এখন ভূমিদস্যু রিপন মিয়ার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে উত্তপ্ত। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি তোফায়েল মাহাজন এবং তার ভাই, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত সদস্য (মেম্বার) দোলন মিয়ার বিরুদ্ধে রিপন মিয়া ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর জমি দখলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, দখলকৃত জমির দখল পাকাপোক্ত করতে এবং ভুক্তভোগীদের আইনি জটিলতায় ফেলতে রিপন মিয়া তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ, উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ ভূমিদস্যুদের এমন দুঃসাহসিক কার্যকলাপ দেখে হতবাক হয়ে পড়েছে এবং প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, রিপন মিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নবীনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত। আপাতদৃষ্টিতে সে গার্মেন্টস শিল্প ব্যবসায়ী হলেও, তার আসল পরিচয় হলো একজন পেশাদার ভূমিদস্যু। প্রভাব বিস্তার করে অন্যের মূল্যবান জমি দখল করাই তার প্রধান কাজ। এই অপকর্ম বাস্তবায়নের জন্য তার নিজস্ব একটি সুসংগঠিত সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে, যারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং এলাকার নিরীহ মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিতে দ্বিধা করে না। রিপন মিয়ার এই বাহিনীর ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পান না।
ভুক্তভোগী তোফায়েল মাহাজন, যিনি এলাকায় একজন সৎ ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে জানান, তাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কিছু উর্বর ও মূল্যবান জমি নবীনগরের নাটঘর ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই জমিগুলোর ওপর দীর্ঘদিন ধরে রিপন মিয়ার কুদৃষ্টি ছিল। বিভিন্ন সময়ে সে তাদের জমি দখলের হুমকিও দিয়েছিল,এমনকি তাদের থেকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে ভুয়া দলিল দেখিয়ে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি দখল রেখেছে রিপন মিয়া যার মামলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে চলমান ।
মামলা দায়ের করার পর থেকে রিপন মিয়ার একাধিক মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন তোফায়েল মহাজন । এসুযোগে আজ [আনুমানিক,সকাল ৯টা ], রিপন মিয়া তার সশস্ত্র দলবল নিয়ে তাদের জমিতে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা জোরপূর্বক জমিতে প্রবেশ করে সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেয় এবং বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে আনুমানিক ৫ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায় ।
তোফায়েল মাহাজনের ভাই দোলন মেম্বার ও তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দিতে গেলে রিপন ও তার বাহিনীর সদস্যরা তাদের শারীরিক নির্যাতন করে এবং জীবননাশের হুমকি দেয়।পরবর্তীতে দোলন মেম্বারের জমিও দখল নেয় রিপন বাহিনী এতে অজ্ঞান হারিয়ে ফেলে দলন মেম্বার তাকে চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ।
চিকিৎসারত দলন মেম্বার, যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রিপন মিয়া শুধু তাদের জমি দখল করেই থামেনি, বরং তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেছে। তিনি বলেন, "আমরা বংশ পরম্পরায় এই জমির মালিক। আমাদের কাছে জমির সমস্ত বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। রিপন মিয়া সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাদের জমি দখল করেছে এবং এখন আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে আইনি জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে এই ভূমিদস্যুর অন্যায় অত্যাচারের সুষ্ঠু বিচার চাই।" তিনি আরও বলেন, রিপন মিয়া স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে নবীনগরের ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণ মানুষ তীব্র নিন্দা জানায়। তারা অবিলম্বে রিপন মিয়া ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
অনেকের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বল নজরদারি ও ক্ষেত্রবিশেষে রহস্যজনক নীরবতার কারণেই রিপন মিয়ার মতো ভূমিদস্যুরা দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে কেউ সাহস করে মুখ খুলতে চান না। তার একটি বিশাল সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং যারা তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন, তাদেরকে মিথ্যা মামলা, শারীরিক নির্যাতন এমনকি অপহরণের শিকারও হতে হয়। রিপন মিয়ার ভয়ে এলাকার বহু পরিবার তাদের ন্যায্য সম্পত্তি হারাতে বসেছে।
অভিযুক্ত রিপন মিয়ার সাথে এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তোফায়েল মাহাজন ও দলন মিয়ার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযোগ গুলোর তদন্ত করলেও রিপন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি । তিনি আরও বলেন, আজকের ঘটনা নিয়ে এখন অভিযোগ দেয়নি আগামীকাল দিবো । তবে, স্থানীয়দের মধ্যে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে এখনও যথেষ্ট সন্দেহ বিদ্যমান। এর আগেও রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠলেও, রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
তোফায়েল মাহাজন ও দলন মিয়ার পরিবার এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। একদিকে তাদের মূল্যবান জমি বেদখল হয়ে গেছে, অন্যদিকে মিথ্যা মামলার বোঝা তাদের ওপর চেপে বসেছে। তারা প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, যেন দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রিপন মিয়া ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের ন্যায্য জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা নবীনগরের ভূমি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং ভূমিদস্যুদের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্যের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন, যদি অবিলম্বে রিপন মিয়ার মতো ভূমিদস্যুদের লাগাম টেনে ধরা না যায়, তবে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে এবং সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তারা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে তোফায়েল মাহাজন ও দলন মিয়া ন্যায়বিচার পান এবং এলাকার মানুষ ভূমিদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পায়। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কতটা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।