এক চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে একজন কর্তব্যনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা তার বাল্যবন্ধুর অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় ভয়াবহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) আশরাফুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেছেন যে, তার বাল্যবন্ধু রিপন (ভূমিদস্যু রিপন মিয়া ) এর অনৈতিক ও বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় তাকে এবং তার পরিবারকে একের পর এক মিথ্যা মামলা, অভিযোগ এবং এমনকি অপহরণের মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে।
আশরাফুল ইসলাম সেলিম জানান, রিপন দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রকার অন্যায় ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত। বন্ধুত্বের খাতিরে তিনি প্রথম দিকে নীরব থাকলেও, রিপনের বেপরোয়া আচরণ এবং সাধারণ মানুষের প্রতি তার অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এই ন্যায়সঙ্গত অবস্থানের কারণেই আজ তাকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
আশরাফুল সেলিমের ভাষ্য অনুযায়ী, রিপন তার বিরুদ্ধে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। শুধু তাই নয়, রিপনের ভাই আমিনুল ইসলাম, যাকে আশরাফুল সেলিম কোনোদিন দেখেননি বলেও দাবি করেছেন, তাকে বাদী করে একাধিক ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। হয়রানির এখানেই শেষ নয়। রিপনের ভাতিজা তানভীর সাব্বির, যে পূর্বে পুলিশে কর্মরত ছিল এবং বর্তমানে চাকরিচ্যুত, তাকে ব্যবহার করে আশরাফুল সেলিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আশরাফুল সেলিম নাকি তানভীর সাব্বিরের চাকরি পুনর্বহালের কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগটি হলো আশরাফুল ইসলাম সেলিমের স্ত্রী ও মেয়েকে অপহরণের ঘটনা। তিনি জানান, রিপন ও তার সহযোগীরা তার পরিবারকে টার্গেট করেছে এবং তার স্ত্রী ও মেয়েকে অপহরণ করে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল ও হয়রানি করার চেষ্টা করছে। এই অভিযোগের সত্যতা এখনো যাচাই করা না গেলেও, একজন পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের অপহরণের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিকেই ইঙ্গিত করে।
এই ঘটনায় স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ আশরাফুল ইসলাম সেলিম ন্যায়বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি আমার বন্ধুর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম, এটাই কি আমার অপরাধ? আজ আমার এবং আমার পরিবারের জীবন বিপন্ন। আমি বিশ্বাস করি, আইনের শাসন এখনো শেষ হয়ে যায়নি এবং আমি এই হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাব।”
রিপনের অন্ধকার জগৎ:
যদিও এই প্রতিবেদনে রিপনের সম্পূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না, তবে আশরাফুল ইসলাম সেলিমের অভিযোগ অনুযায়ী, রিপন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বিভিন্ন প্রকার অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার একটি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে, যারা তার অবৈধ কার্যকলাপ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে সহায়তা করে। স্থানীয়ভাবে তার যথেষ্ট প্রভাব থাকায়, অনেকেই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। আশরাফুল সেলিমের এই সাহসী পদক্ষেপ রিপনের অন্ধকার জগতের বিরুদ্ধে একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি বড় উদাহরণ।
রিপনের কর্মকালাপ শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, তার প্রভাব বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্কের জোরেই সে একের পর এক অনৈতিক কাজ করে পার পেয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা, এবং স্থানীয় টেন্ডারবাজিতে তার নাম প্রায়শই শোনা যায়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও, রহস্যজনক কারণে সেগুলো আলোর মুখ দেখে না।
একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন ভয়াবহ হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা পুলিশের অভ্যন্তরেও অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। যদি কোনো সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা তার বন্ধুর অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তাহলে অন্য কর্মকর্তারা ন্যায়সঙ্গতভাবে কাজ করার সাহস হারিয়ে ফেলতে পারেন। এই ঘটনা পুলিশের ভাবমূর্তির জন্যও একটি বড় ধাক্কা। অনেক পুলিশ সদস্য মনে করেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, পুলিশ বিভাগে এখনো কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং অপরাধীদের সাথে যোগসাজশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আশরাফুল ইসলাম সেলিম তার সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য পরিচিত। তিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং কোনো প্রকার আপোষ করেননি। তার মতো একজন কর্মকর্তার এমন পরিণতিতে তারা মর্মাহত এবং একই সাথে আতঙ্কিত। তারা মনে করেন, যদি একজন পুলিশ কর্মকর্তাও তার সততার জন্য নিরাপদ না থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
আশরাফুল ইসলাম সেলিমের অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। এই ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে জনমত গঠন করা গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষভাবে এই ঘটনার প্রতিটি দিক তুলে ধরতে হবে এবং প্রশাসনের ওপর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঘটনার গভীরে গিয়ে আসল সত্য তুলে ধরতে হবে এবং রিপনের অপকর্ম ও তার পেছনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
সমাজের সচেতন মহল এবং মানবাধিকার কর্মীদের উচিত আশরাফুল ইসলাম সেলিমের পাশে দাঁড়ানো এবং তার ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া। ভূমিদস্যুতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, আইনজীবী সমিতি, এবং নাগরিক সমাজকে একত্রিত হয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
আশরাফুল ইসলাম সেলিম একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও যদি তার বন্ধুর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কারণে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হন, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সমাজে এখনো ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। এই অন্ধকার জগৎের মূলোৎপাটন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সময়ের দাবি। আশরাফুল ইসলাম সেলিমের সাহসিকতা যেন বৃথা না যায় এবং তিনি যেন ন্যায়বিচার পান, সেটাই এখন সকলের প্রত্যাশা। একই সাথে, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।